কারাগারে বাবাকে যা বললেন মিন্নি

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা আদালে স্বীকার করেছেন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ অবস্থায় শনিবার মিন্নির সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যান তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা।


এসময় দুই কারারক্ষীর সাহায্যে কোনোমতে দাঁড়িয়ে থাকা মিন্নিকে দেখে পরিবারের নারী সদস্যরা কেঁদে ফেলেন। পুরুষ সদস্যরা তাকে নানা কথা জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু ঠিকমতো সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারছিলেন না। এদিক-ওদিক ঢলে পড়ছিলেন। তাকে দুই পাশ থেকে ধরে রাখছিলেন দুই নারী কারারক্ষী।

মিন্নি তার বাবাকে শুধু একবারই বলছিলেন, ‘কী নির্যাতন করেছে বুঝে নেও।’

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর মেয়ের সঙ্গে দেখা করে আসার পর গণমাধ্যমকে জানান, দুই কারারক্ষী তার মেয়েকে অনেকটা টেনেই তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে আসেন। মিন্নি হাঁটতে পারছিলেন না। এমনকি দাঁড়াতেও পারছিলেন না।

তিনি দাবি করেন, তার মেয়ের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা তাকে অনেক প্রশ্ন করেছি। মিন্নি দু-একটার উত্তর দিয়েছে। নির্যাতনের বিষয়ে শুধু বলেছে, ‘বাবা, আমায় দেখে বুঝে নেও কী নির্যাতন ওরা চালিয়েছে। আমি যদি পুলিশের শেখানো কথা আদালতে না বলি, তাহলে আরো ১০ দিন রিমান্ডে এনে ওরা আমার ওপর নির্যাতন চালাত। তাই নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে বলেছি খুনের ঘটনার পরিকল্পনার সঙ্গে আমি জড়িত।

মোজাম্মেল আরো বলেন, আমার মেয়ের ওপর যে ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে, তা মেয়েই খুলে বলছে না। আমার দাবি, এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হোক। যারা মিন্নিকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করিয়ে নিয়েছে তারা যেন আইনের আওতায় আসে।

তিনি আরো বলেন, খুনিদের বাঁচাতে আমার মেয়েকে সাক্ষী থেকে আসামি বানানো হলো। জেলা পুলিশ প্রশাসনের ওপর আমার কোনো আস্থা নেই। আমি এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।

এদিকে, গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রিফাতকে স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই দিন রাতে রিফাত শরীফের বাবা আবদুল দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকেই।

গত ১৩ জুলাই মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেন। পরদিন ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে মানববন্ধন হয়, যেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা সুনাম দেবনাথও ছিলেন।

শ্বশুর অভিযোগ তোলার পরদিন মিন্নি তা অস্বীকার করে পাল্টা বলেছিলেন, দুলাল শরীফ ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায় পড়ে তাকে জড়িয়ে বানোয়াট কথা বলছেন।

এরপর গত মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে মিন্নিকে তাঁর বাবার বাসা থেকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায়। প্রায় ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর রাত ৯টার দিকে তাঁকে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন বুধবার পুলিশ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজত (রিমান্ড) চেয়ে আদালতে আবেদন করে। বিচারক শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুই দিন পর শুক্রবার ১৬৪ ধারায় তিনি জবানবন্দি দেন। পুলিশ বলেছে, জবানবন্দিতে মিন্নি কী বলেছেন, সেটি তারা জানে না।